
আশ্রাফুল আলম নোবেল পাটওয়ারী AANP: অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে
রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত পদোন্নতি নীতিমালা হচ্ছে। এসব ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনালী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, বেসিক ব্যাংক পিএলসি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)। রাষ্ট্রমালিকানাধীন এই ব্যাংকগুলোর জন্য অভিন্ন নীতিমালাটি তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
নীতিমালাটি অফিসার বা সমমানের পদ থেকে সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও উপ-মহাব্যবস্থাপকদের (ডিজিএম) জন্য প্রযোজ্য হবে। এরই মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে।
সোমবার (৫ মে) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ৬ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) অংশ নিবেন।
বিভাগে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নীতিমালার খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। সবার মতামত নেওয়া প্রয়োজন। এজন্যই আজ সচিবালয়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত হতে পারে। এটি পাস হলে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা বাতিল হবে। তবে বাতিল হলে আগের নীতিমালার অধীনে যেসব ব্যবস্থা চলমান সেগুলোর নিষ্পত্তি হবে বাতিল হওয়া নীতিমালার বিধান অনুযায়ী। নতুন নীতিমালায় কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা দেবে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
নতুন নীতিমালায় পদোন্নতির জন্য মোট ১০০ নম্বর থাকবে। এর মধ্যে ৮ নম্বর থাকবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। যেখানে মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর হবে ৪। বাকি ৯২ নম্বরের মধ্যে পদোন্নতি প্রত্যাশীকে কমপক্ষে ৭৫ নম্বর পেতে হবে। উভয় নম্বর যোগ করেই হবে মেধাতালিকা। তাছাড়া দেশের বাইরে থাকা ব্যাংকের কর্মীদের জন্য ভার্চ্যুয়াল কিংবা সশরীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
পদোন্নতিতে বাধা যেখানে:
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, পদোন্নতি বিবেচনা করা হবে চাকরির সন্তোষজনক রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে। তবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কোনো কর্মচারী তাঁর অধিকার হিসেবে পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করতে পারবেন না। কোনো কর্মচারীর ফিডার পদে সর্বশেষ তিন বছরের যেকোনো বছরের চাকরি সন্তোষজনক না হলে, অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে পরের পদের জন্য বিবেচিত হবেন না।
এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে, বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ও দণ্ডকাল বহাল থাকলে এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে বা দণ্ড পেলে তাঁকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে না।
লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে দণ্ডাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের এক বছর পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য কেউ বিবেচিত হবেন না। গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে তা হবে দুই বছর। এ ছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে বা কেউ গ্রেপ্তার হলে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত পদোন্নতি হবে না। তবে পদোন্নতির প্যানেলে নাম ওঠার পর কেউ অভিযুক্ত হলে এবং শাস্তি ছাড়া অব্যাহতি পেলে তিনি শূন্য পদ সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।
নম্বর বিভাজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন:
পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মধ্যে এসিআরের পাঁচ বছরের গড় নম্বর ৪৫। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৫, ফিডার পদে চাকরিকাল ১৪, ফিডার পদে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ৪, ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা (ব্যাংকিং ডিপ্লোমা) ১০, আইসিএবি বা আইসিএমএবি থেকে পাওয়া পেশাগত যোগ্যতা ১, দুর্গম এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে ফিডার পদে কাজের অর্জন ২ এবং সাক্ষাৎকার ৮ নম্বর।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিদ্যমান নীতিমালায় স্নাতকোত্তর পাসের জন্য নম্বর দেওয়া আছে ১৪। কোন শ্রেণিতে পাস করার জন্য কত নম্বর, তা উল্লেখ করা নেই। প্রস্তাবিত নীতিমালায় ১৫ নম্বর বরাদ্দ করে পাসের শ্রেণিওয়ারি আলাদা নম্বরের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণির জন্য ৪, দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য ৩ ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য ২ নম্বর রাখা হয়েছে। স্নাতক (ডিগ্রি) বা সমমান, উচ্চমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও এভাবে নম্বর ভাগ করা হয়েছে।
এদিকে ব্যাংকাররা মনে করেন, যাঁরা পুরোনো পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে এসেছেন তাঁদের তুলনায় সিজিপিএ পদ্ধতিতে পাস করে আসা ব্যাংকাররা চার ধাপের ফলাফলে অন্তত ৪ নম্বরে এগিয়ে থাকবেন, যা একটি বৈষম্য। এ ছাড়া শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা ব্যাংকারদের জন্য এত দিন ১ নম্বর বরাদ্দ ছিল। এটি বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২। শাখার সংখ্যা সীমিত থাকার কারণে শাখা ব্যবস্থাপক হতে চাইলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এখানেও বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে ।।।