আশ্রাফুল আলম নোবেল পাটোয়ারী : বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি তথা এমপিওভুক্ত। একই যোগ্যতা ও অভিন্ন সিলেবাস হওয়া সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ বিরাট বৈষম্যের শিকার; যার বাস্তব উদাহরণ হলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মাত্র এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা। এটি বর্তমান যুগ অনুযায়ী একেবারেই বেমানান।
যদিও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি স্কেলে বেতন পান। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি। ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন। কয়েক দশক পর দেশের সব বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়েকটি ধাপে জাতীয়করণ হয়। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।
এখন সময় হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের। অনেকের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হলে শিক্ষার মান কমে যাবে। ধারণাটি একেবারেই ঠিক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা ঢালাওভাবে জাতীয়করণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমেনি; বরং বেড়েছে। মাধ্যমিক স্তর জাতীয়করণ হলে শিক্ষাব্যবস্থায় আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। এর ফলে শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো আইএলওর সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা দরকার। এটি এখন সময়ের দাবি।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কাওছার আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো. সেলিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বজলুর রহমান বলেন, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দিয়ে। পরিতাপের বিষয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২০ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষার বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। তাই আমরা আপনাদের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
বিটিএর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১৩ মার্চ সকাল ১১টায় সারাদেশে জেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক/বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
১৪ মার্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীকরণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ ঘণ্টার কর্মবিরত পালনসহ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হবে।
২০ মার্চ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এরপরও যদি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ আসন্ন জাতীয় বাজেটে প্রজেনীয় বরাদ্দ রাখা না হয়, তবে সারা দেশের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বাজেট ঘোষণার পরে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।