
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড: মুহাম্মদ ইউনুস হাজার বছরেও একজন জন্ম নেয়না।তিনি শুধু একটি নাম নন বরং একটা জাতির স্বর্ণাক্ষরে লেখা কালজয়ী ইতিহাস”
নূরুল্লাহ সাঈদী (গোল্ড মেডেলিষ্ট)
ইদানীং ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় খুবই আলোচিত মুখ বিশিষ্ট ব্যাংকার ও লেখক জ্বনাব নূরুল্লাহ সাঈদী(গোল্ড মেডেলিষ্ট)। ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে উপদেষ্টা করার দাবী উঠছে। এ সকল বিষয় ও সমসাময়িক প্রসংগ নিয়ে আমরা গত ১লা মার্চ রোজ শনিবার তার এক স্বাক্ষাৎকার গ্রহন করি।স্বাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক অর্থনীতির খবরের সম্পাদক জ্বনাব আশ্রাফ।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড: মুহাম্মদ ইউনুস হাজার বছরে ও একজন জন্ম নেয়না।তিনি শুধু একটা নাম নন বরং একটা জাতির স্বর্ণাক্ষরে লেখা কালজয়ী ইতিহাস!
আমরা তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।বর্তমানে তাকে দেশের প্রধান উপদেষ্টা বানাতে পেরে আমরা গর্বিত ও আবেগ আপ্লূত। স্বাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারা ফুটে উঠেছে যা পাঠকদেরকে উপকৃত করবে।
স্বাক্ষাৎকারটি নীচে হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন:ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় আপনাকে উপদেষ্টা করার দাবী উঠছে এবং ঢাকা -চট্টগ্রামে মানব বন্ধন ও হয়েছে এর কারন কি?
উত্তর : এর উত্তর যারা দাবী তুলছে তারাই আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবে।তবে তারা জুলাই বিপ্লব এবং পরববর্তীতে আমার অবদানকে বিবেচনা করেই দাবী তুলছে বলে আমি মনে করি।আমি ব্যাংকার হলেও ছোট বেলা হতে দেশ ও জাতি নিয়ে ভাবি। আমার কাছের লোকেরা জানে আমি মানুষের জন্য কি করছি এবং সমাজের জন্য আমার অবদান যা দেশের মানুষের কাছে এখনো
অপ্রকাশিত।যারা জানে তারা দাবি তুলছে।
প্রশ্ন:আপনার অবদানগুলো বলুন?
উত্তর :দেখুন সব অবদানতো বলা যাবেনা এবং নিজের ঢোল নিজের পিটানো ও উচিতনা।তবে সামপ্রতিক জুলাই বিপ্লবে জীবনের জুঁকি নিয়ে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছি।৫ই আগষ্ট ছাত্র -জনতার প্রেরনার জন্য এবং বিপ্লবের সম্মানে আমি গনভবনে আমার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেছি যা দেশব্যাপি ভাইরাল হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্বেরাচারী প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন চপ্পুর পদত্যাগের দাবীতে পর পর দুই দিন বঙ্গভবন ঘেরাও করেছি।সেখানে আমার সাক্ষাৎকার ও দেশব্যাপী ভাইরাল হয়েছে। শহীদ নূর হোসেন দিবসে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিও তে আমি আন্দোলনে অংশ গ্রহন করি।শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা পত্রেের সমাবেশে ও আমি ছিলাম।
দেশের জন্য যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমি আছি।হাসিনার পুলিশের পিটুনিতে আমি মারাত্নক আহত হয়েছি।প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন দিতে ও প্রস্তুত।
প্রশ্ন:আাপনি জাতিকে টেকনিক্যাল জাতি বানানোর স্বপ্ন দেখেন বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন?
উত্তর : বিষয়টি খুবই সহজ।প্রতিটি মানুষের একটা টেকনিক্যাল নলেজ থাকবে।ড্রাইভিং, প্রাইমারি ট্রিটম্যান ও সামরিক প্রশিক্ষন সবাইকে জানতে হবে।স্কুলেই তা শিখিয়ে দেয়া হবে।এ বিষয়ে আমার একটা লেকচার আছে সবাইকে দেখার অনুরোধ করছি। আমার ফেসবুকে আপলোড দেয়া আছে।
প্রশ্ন:আপনার আইকন কে? এবং কেন?
উত্তর :কোটি কোটি মানুষের মতো আমার আইকনও প্রফেসর ড: মুহাম্মদ ইউনুস!একজন ইউনুস হাজার বছরে ও জম্ম নেয়না।আমরা তাঁকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। বর্তমানে এ মহান কালজয়ীকে বাংলাদেশের ইমাম বানাতে পেরে আমরা গর্বিত ও আবেগ আপ্লুত। তার হাতে বাংলাদেশকে পাঁচ বছরের জন্য ছেড়ে দেন।দেখেন বাংলাদেশকে কোথায় হতে কোথায় নিয়ে যান!এ মহান কর্মবীরের সাথে জীবনে একদিন ও কাজ করার সুযোগ আল্লাহ তায়ালা দিলে জীবনকে স্বার্থক মনে করবো!জানিনা সেটা ভাগ্যে আছে কিনা!তবে আশা ছাড়িনি! দোয়া করবেন!
প্রশ্ন:প্রফেসর ড:মুহাম্মদ ইউনুছ প্রধান উপদেষ্টা হওয়াতে জাতির মধ্যে কি প্রভাব পড়ছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর :শিক্ষক ভালো হলে ছাত্র ভালো হয়!জাতির ইমাম যদি হয় জাতির সূর্য সন্তান এবং পৃথিবীর অন্যতম সেরা নোবেল অরিয়েন্ট তাহলে এখন আঠার কোটি মানুষ আমরা সবাই ডঃ ইউনুস হবো!এর চেয়ে বড় প্রভাব আর কি?আমরা ভাগ্যবান!আপনার সন্তান আমার সন্তান এখন ডক্টর ইউনুসের মতো মহান হবার কথা বলছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি বলুন? তাঁর শিক্ষা, লেখা -পড়া ও মানবিক মূল্যবোধের আলোয় আমরা এখন আলোকিত এর চেয়ে আর কি চাই? উনার মতো আরেকজন এমন রাষ্ট্রপ্রধান দেখানতো?আজ আমরা আমাদের বাচ্চাদের বলতে পারছি ভালো লেখাপড়া করলে নবেল পুরস্কার পাওয়া যায় আর রাষ্ট্রপ্রধানও হওয়া যায়! ড:ইউনুস শুধু একটা নামনা বরং একটা জাতির স্বর্ণাক্ষরে লেখা কালজয়ী ইতিহাস!
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের ফিরে আসার বিষয়ে কি বলবেন?
উত্তর : আপনার আমার সন্তান যারা আওয়ামী বিরোধী টেবলেট খাইছে এরা মরে গেলে যদি ফিরতে পারে।তার আগে সমভাবনা কম।এতো মানুষের রক্তকে এ প্রজম্ন ভুলবে কি করে?এ ট্রমা থেকে এরা জীবদ্দশায় বের হতে পারবে বলে মনে হয়না! আওয়ামীলীগ আস্তে আস্তে মুসলিম লীগের মতো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ভারতের মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে আপনার মন্তব্য বলবেন?
উত্তর : একটা কথা আছেনা “আল্লাহর পাগল আল্লাহ থামায়ে দেয়”! তাদের লাফালাফি প্রায় থেমে গেছে।ওদের মিডিয়ার প্রসববেদনা চলছে! ডেলিভারি হয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে!আর কিছু দিন অপেক্ষা করুন!প্রফেসর ড: মুহাম্মদ ইউনুস কি জিনিস ওরা ভালোভাবে টের পাবে।
ট্রাম্পের সাথে খেলে মোদিকে কিভাবে গোল দিলো দেখলেননা? আরো বহু খেলা সামনে আছে।ইউনুস স্যার দাবার পাশা সময় মতো খেলবেন ইনসাআল্লাহ!আমাদের চোখ -কান খোলা আছে। কোথাকার পানি কোথায় গড়ায় আমরা তা দেখে নেবো!আমাদের জাতীয় ঐক্যের কাছে ওদের সব যড়যন্ত্র পরাজিত হবে বলে মনে করি।
প্রশ্ন: বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সম্পর্কে কিছু বলুন?
উত্তর :বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এখন আগের তুলনায় একটিভ! অনেকে মনে করেন তাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।তবে তাদের সীমাবদ্ধতা ও আছে বলে মনে করি।আঠারো কোটি মানুষের জন্য একেকটা মিনিষট্রি।অনেক কাজ পেন্ডিং পড়ে থাকে।কতো করবেন? শেষ করা কঠিন। রাত্রদিন কাজ করে একটা মন্রনালয় সামলানোই কঠিন।আঠারো কোটি মানুষের সেবাতো এতো সহজ না।এ জন্য একজনের কাছে একাধিক মনত্রনালয় না থাকাই ভালো।নাগরিকদের সেবার জন্য উপদেষ্টা বেশি হলে ভালো।মানুষ দ্রুত সেবা পাবে।মনে রাখতে হবে জাতীয় জীবনে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের কাজ সময়ে শেষ নাহলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো।শুধু উপদেষ্টা দের দোষ দিলে হবেনা বাস্তবতা ও দেখতে হবে।
এজন্য উপদেষ্টা পরিষদ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।এ জাতির জীবন থেকে অনেক সময় হারিয়ে গেছে। আর দেরি করার সুযোগ নেই।
এখন আমাদের সবাইকে ড: ইউনুস স্যারের মতো এক মাসের কাজ একদিনে করতে হবে।
প্রশ্ন:বর্তমানে জামায়াত- বিএনপির কাদা ছোড়া ছুড়ি নিয়ে মন্তব্য করুন?
উত্তর : এটাকে আমি খারাপ চোখে দেখছিনা।জামায়াত ও বি এন পি দুটি আলাদা দল।তাদের দর্শন ও স্ট্র্যাটেজি আলাদা।সামনে নির্বাচন। এটা হচ্ছে লক্ষ্যে পৌঁছার প্রতিযোগিতা।এটা বৈধ।তবে এটা যাতে সংঘাতে রুপ না নেয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।দেখেননা জাতীয় প্রয়োজনে সবাই এক হয়ে যাচ্ছে। এটাই আমাদের রাজনীতির সৌন্দর্য! ছোট খাটো নেতারা দুই এক কথা বলছেন।মূল নেতৃত্ব ঠিক পথেই হাঁটছে।
প্রশ্ন:৫ই আগষ্টের পর চার দিন দেশে কোন সরকার ছিলনা এ সম্পর্কে কিছু বলুন?
উত্তর : আমার দেশের মানুষ পৃথিবীর সেরা ভালো মানুষ সেটা ঐ চারদিনে প্রমান হয়ে গেছে। যারা বাঙালি খারাপ বলে গালি দেয় তাদের জন্য আমার করুনা হয়!ভাবেনতো এ রকম যদি আমেরিকায় হতো তাহলে কি হতো? কতো মানুষ মারা যেতো আর কতো চুরি- ছিন্তাই হতো? কতো নারী ধর্ষিত হতো?ওবায়দুল কাদের বলেছিলো পাঁচ লক্ষ লোক মারা যাবে।কয়কন মারা গেছে বলেন?একেবারে নগন্য। যদিও সেটাও প্রত্যাশিত নয়।একটা জীবনের বিনিময় কিছু হতে পারেনা।আদর্শিকভাবে আমরা পৃথিবীর সেরা জাতি তা আবার প্রমানিত হয়েছে।
প্রশ্ন: দেশের যুবসমাজ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন?
উত্তর : সরকারকে বলুন যুবসমাজকে কয়েক বছরের জন্য আমার কাছে ছেড়ে দিক।আমি গোটা যুবসমাজকে টেকনিক্যাল যুব সমাজ বানিয়ে দিবো।মেট্রিক পাশ করবে টেকনিক্যাল ম্যান হয়ে কাজে চলে যাবে।সাথে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় কথা বলা শিখিয়ে দিবো।গোটা জাতির নব্বই ভাগ মানুষ হবে টেকনিক্যাল। বলেনতো তখন এ জাতিকে কে ঠেকাবে?
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে কিছু বলুন?
উত্তর : আমার কবিতা ২য় স্বাধীনতার মাঝে আপনার প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। কবিতাটি এখানে বলছি-
“৩৬ শে জুলাই
পেয়েছি
আমরা ২য় স্বাধীনতা,
ইতিহাস পড়ো বাঙালি কখনো
মানেনি পরাধীনতা।
প্রথম স্বাধীনতা অর্জিত হয়
১৬ ই ডিসেম্বর,
রচিত হলো সেই দিন
পাকিস্তানি শোষণের কবর।
২য় স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা
৩৬ই জুলাই,
ভারতীয় আধিপত্যবাদ স্বদল বলে
গিয়েছে পালাই।
দুই শোষকের শোষন হতে
মুক্ত হলো দেশ,
নিজের পায়ে হাঁটছে এখন
সোনার বাংলাদেশ”।
বাংলাদেশের এখন নিজের পায়ে হাঁটছে।এজন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতে খুবই উজ্জ্বল!
ষড়যন্ত্র আছে ষড়যন্ত্র থাকবে।কঠিন ধৈর্য ও সাহস নিয়ে আমরা তা মুকাবিলা করবো।
আগামীর বাংলাদেশ তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবে।
এ দেশের অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ!