স্বাস্থ্য ডেস্ক : কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার সেরা উপায় হলো করোনার টিকার দুটি ডোজ গ্রহণ। কিন্তু এটাও সত্যি যে, করোনার টিকা সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারে না। টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অবশ্য সেক্ষেত্রে উপসর্গ মারাত্মক না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, সম্পূর্ণ টিকা নেওয়ার পরও কিছু লোক করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। অধিকাংশেরই সংক্রমণ হয়েছে ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে, মূল করোনা নয়। আরো জানা গেছে, টিকা নেওয়ার পরও যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এবং যারা টিকা ছাড়াই সংক্রমিত হয়েছেন উভয়ের উপসর্গে কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের একটি নতুন গবেষণা (এখনো চলমান) বলছে, সম্পূর্ণ টিকা গ্রহণের পর সংক্রমণ ও কোনো ডোজ ছাড়াই সংক্রমণ উভয়ের উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। জো কোভিড সিমটম স্টাডিতে যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত লোকেরা একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের উপসর্গ সম্পর্কে জানান। টিকা নেওয়ার পরও যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশের সংক্রমণের জন্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দায়ী ছিল। অ্যাপ ভিত্তিক গবেষণাটিতে টিকা গ্রহণ করেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত ব্যক্তি এবং টিকা ছাড়াই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত ব্যক্তি উভয়েই অংশগ্রহণ করেন। পর্যালোচনায় দেখা গেল, টিকা গ্রহণ করা লোকদের উপসর্গ খুবই কম ছিল এবং তাদের মধ্যে মারাত্মক পরিণতির হারও কম।
* টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তিন শীর্ষ উপসর্গ
যারা টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে এই তিনটি উপসর্গ বেশি লক্ষ্য করা গেছে- মাথাব্যথা, সর্দি ও হাঁচি।কোভিড-১৯ এর একটি প্রাথমিক উপসর্গ হলো মাথাব্যথা। অনেকেই মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা অনুভব করে থাকেন। একারণে করোনার সংক্রমণে নাকি অন্য কারণে মাথাব্যথা করছে তা ধারণা করা কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ জনিত মাথাব্যথা অনবরত হয়ে থাকে এবং কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়। কোভিড-১৯ এর আরেকটি প্রাথমিক উপসর্গ হলো সর্দি। এটি ঠান্ডারও প্রচলিত উপসর্গ। কিছু গবেষণায় জানা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে অনেকেরই সর্দি হয়েছে। এমনকি যারা টিকা গ্রহণের পরও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও সর্দি ছিল। সকল বয়সীদের মধ্যে উপসর্গটি ছিল। টিকা নেওয়ার পরও কোভিড-১৯ হয়েছে এমন অনেকেরই সর্দির সঙ্গে ঘনঘন হাঁচিও ছিল। মৌসুমী অ্যালার্জিতেও হাঁচির উদ্রেক ঘটতে পারে।
* টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের অন্যান্য উপসর্গ
যারা টিকা গ্রহণ করেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা আরো কিছু উল্লেখযোগ্য উপসর্গে ভুগেছেন, যেমন- গলা ব্যথা ও ঘ্রাণশক্তি বিলোপ।কোভিড-১৯ এর গলা ব্যথা কেবল ব্যথাই নয়, গলায় শুষ্কতাও অনুভব হতে পারে। এছাড়া কথা বলতে/গিলতে অসুবিধা হতে পারে, গলার ভেতর লাল হতে পারে ও ফুলে যেতে পারে। কেউ কেউ কাশি দেয়ার সময়ও গলায় ব্যথা অনুভব করেছেন। মূল কোভিড-১৯ এর একটি বেশ পরিচিত উপসর্গ হলো ঘ্রাশক্তি হারানো। সাধারণত সংক্রমণ থেকে মুক্তি ঘটলেই ঘ্রাণশক্তি ফিরে আসে, তবে ১০ শতাংশ লোকের ঘ্রাণশক্তি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ৬ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। যদিও টিকা ছাড়াই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উপসর্গটির প্রচলন কম, কিন্তু সম্পূর্ণ টিকা গ্রহণের পর করোনায় আক্রান্ত হলে (এমনকি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেও) ঘ্রাণশক্তি বিলোপের সম্ভাবনা বেশি।
* টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের উপসর্গ
যেখানে টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে টিকা না নিলে যে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এখনো টিকা নেননি তারা করোনায় সংক্রমিত হলে যেসব উপসর্গে ভুগতে পারেন, তন্মধ্যে প্রধান পাঁচটি হলো-
* মাথাব্যথা
* গলা ব্যথা
* সর্দি
* জ্বর
* অনবরত কাশি।
টিকা গ্রহণ করা ব্যক্তির সংক্রমণ ও টিকা না নেওয়া ব্যক্তির সংক্রমণ উভয়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে উপসর্গে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উভয় সংক্রমণের ক্ষেত্রে এর বাইরেও উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। এখানে মূলত অধিক প্রচলিত উপসর্গসমূহ দেয়া হয়েছে। তাই শ্বাসতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যকোনো উপসর্গ ভুগলেও সতর্কতার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে করোনা টেস্ট করাই ভালো। টেস্টে নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত অন্যদের থেকে দূরে থাকুন, যথেষ্ট বিশ্রাম নিন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও পুষ্টিকর খাবার খান। চিকিৎসকের যোগাযোগ নম্বর সংগ্রহে রাখুন, উদ্বেগজনক কিছু তাকে অবহিত করুন।